মঙ্গলবার, জুন ৬, ২০২৩
The Report
২৪ বছরেও পার্বত্য শান্তি চুক্তিতে হতাশা অব্যাহত

২৪ বছরেও পার্বত্য শান্তি চুক্তিতে হতাশা অব্যাহত

প্রকাশের সময় : December 07, 2021 | বাংলাদেশ

দীর্ঘ দুই দশক ধরে পাহাড়ে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনের পর ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ চুক্তির দীর্ঘ ২৪ বছরেও নানা ধারা ও উপধারা আজও বাস্তবায়ন হয়নি বলে মনে করে চট্টগ্রামের আদিবাসী ও পাহাড়ি নেতারা। তারমধ্যে ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠা বাস্তবায়ন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও সরকারি দলের নেতারা অনেক ধারা-ই বাস্তবায়ন হয়েছে বলে দাবি করেন। পাহাড়িদের অধিকার বঞ্চনা সহ  নানা কারণে দীর্ঘ সময় ধরে সশস্ত্র আন্দোলন চলে পার্বত্য চট্টগ্রামে। এতে অসংখ্য বাঙালি ও পাহাড়ি হতাহত হয়। পাহাড়ি উন্নয়ন-অগ্রগতি শান্তি-সমৃদ্ধি প্রণয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এতে করে প্রায় ২০০০ শান্তি বাহিনীর সদস্য অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। কিন্তু চুক্তি নিয়ে রয়েছে পক্ষে-বিপক্ষে অসংখ্য মত। 

এদিকে চুক্তি বর্ষপূর্তিতে ৭ ডিসেম্বর ২০২১ইং তারিখে সিরডাপ মিলনায়তন, ঢাকায় (এএলআরডি) কর্তৃক আয়োজিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির  ২৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত করেন।এসময় উপস্থিত ছিলেন সম্মানী অতিথি উষাতন তালুকদার, সাবেক সংসদ সদস্য, রাঙ্গামাটি। 

সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে এ বিষয়ে আলোচনা করেন শামসুল হুদা, (নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি) ও খুশী কবির ( সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন ও সমন্বয়কারী)। 

উক্ত আলোচনায় গৌতম দেওয়ান বলেন ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি মেকানিজম তৈরি করতে হবে। সরকারের দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। পার্বত্য চুক্তির আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রাম সংশ্লিষ্ট সকল আইন সংশোধন করতে হবে। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন ও বাস্তবায়ন কমিটিকে কার্যকর করতে হবে। 

আলোচক শামসুল হুদা বলেন, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন দীর্ঘ বছরের তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। বর্তমান সরকার ছিল এই চুক্তির প্রধান রূপকার এখন সেই সরকারের ক্ষমতায় আমরা কেন এই চুক্তির বাস্তবায়ন পাবো না। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আকুল আবেদন জানাই যে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য। কারন চুক্তি সব ধারা বাস্তবায়ন না হয় ভূমিবিরোধ সহ নানা সম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সোনার বাংলা গড়তে মানুষের অধিকার বাস্তবায়নে এই চুক্তি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। 

 

এসময় আলোচক খুশী কবীর বলেন,  শান্তিচুক্তির মত এত বিশাল অর্জনকে আমরা কেন জানি লুকিয়ে রাখছি। এতে কাদের লাভ হচ্ছে সে বিষয়টা খতিয়ে দেখতে হবে। ভূমি দখল সহ সকল অন্যায় প্রতিরোধ করতে এটিকে সামনে আনতে হবে। 

উক্ত আলোচনায় সম্মানিত অতিথি সাবেক সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের  চুক্তির বাস্তবায়ন এখন ফ্রিজে রেখে দেওয়ার মতো অবস্থা। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সংখ্যালঘুরা। তাই আমাদের সকলকে জনমত গঠন করে যৌথভাবে চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের কাছে ভালো চট্টগ্রামের সংখ্যালঘুদের বর্তমান অবস্থা জানাতে হবে। 

এ সময় মুক্ত আলোচনায় সাধারন পাহাড়িরা বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বললেও সরকার এখনও মৌলিক ধারাগুলো বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তারা এখনো নিরাপত্তাহীন  ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। 

পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ায় এত বছরেও প্রত্যাশিত শান্তির দেখা মেলেনি বলে মনে করেন সাধারণ পাহাড়িরা। সবার আন্তরিকতা থাকলে চুক্তির বাকি ধারা গুলো পূরণ হবে বলে সবাই আশা বাদী।