পটুয়াখালীর রাখাইনরা সংখ্যাশূন্য হতে চলেছে।
পটুয়াখালী অঞ্চলের রাখাইনদের অবস্থা শোচনীয়। যেখানে কয়েক দশক আগে এই অঞ্চলে লক্ষাধিক রাখাইন বাস করত, সেখানে তাদের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র আড়াই হাজারে। রাখাইনরা আর এই জেলায় সংখ্যালঘু নয়, তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার পথে।
পটুয়াখালীর রাখাইন অধ্যুষিত এলাকা পরিদর্শন শেষে নাগরিক প্রতিনিধি দলের এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
১৪ সদস্যের নাগরিক প্রতিনিধিদল গত ২৬ থেকে ২৮ নভেম্বর কয়েকটি রাখাইন জনপদ পরিদর্শন করে। এর মধ্যে আছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের ছয়আনীপাড়া ও চৈয়াপাড়া, মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের তুলাতলীপাড়া ও মধুপাড়া, কুয়াকাটা পৌর এলাকার কেরানীপাড়া এবং লতাচাপলী ইউনিয়নের মিশ্রিপাড়া। পরিদর্শনের সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
প্রতিনিধিদলের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। তিনি বলেন, সারাদেশে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ নানা ধরনের শোষণ, বঞ্চনা, উচ্ছেদ ও ভয়ের মধ্যে দিনযাপন করছে। পটুয়াখালী অঞ্চলের রাখাইন নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের অবস্থা খুবই শোচনীয়। রাখাইনরা প্রথমে ওই এলাকায় একটি কূপ খনন করে, তাই নাম হয় 'কুয়াকাটা'। বেশিরভাগ রাখাইন আজ দেশত্যাগ করে। শুধু সংখ্যালঘু নয়, তারা এখন সংখ্যালঘু হতে চলেছে।
রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ১৯৪৭ সালে পটুয়াখালীতে ১৪৪টি ও বরগুনায় ৯৩টি রাখাইনপাড়া ছিল। এখন ২৬ এবং ১৩ টি পাড়া রয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ রাখাইনপাড়া, যেটি এ বছর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, সেটি হলো ছায়ানীপাড়া। পায়রা বন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণ করায় এলাকাটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। রাখাইনদের সব উৎসবই জমিকেন্দ্রিক দাবি করে রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, রাখাইনের সব জমি, পুকুর ও শ্মশান বেদখল হয়ে যাওয়ায় তারা তাদের জমি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। প্রতারণার মাধ্যমে জমি দখল, রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও স্বার্থান্বেষী দালালদের দৌরাত্ম্য এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের নিষ্ক্রিয়তার কারণে তারা প্রতিনিয়ত জমি হারাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে এনজিও নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, রাখাইনরা ওই এলাকায় না গেলে তাদের অবস্থা কতটা ভয়াবহ তা বুঝতে পারত না। দেশে পালিত হচ্ছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর নানা উৎসব। কিন্তু আজ রাখাইনরা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। মানবাধিকার কর্মী নুর খান বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও সংখ্যালঘুদের জমি দখল করা হয়েছে। তাদের নারী নির্যাতন করা হয়েছে। গণতন্ত্রের অভাবে এসব হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, গণতন্ত্র শক্তিশালী হলে অনেক ক্ষেত্রে নির্যাতন-নিপীড়ন কমে যেত। সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য মাইন্থিন প্রমীলা। এতে সভাপতিত্ব করেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। তিনি বলেন, ভূমি প্রশাসনের দুর্নীতির কারণে অনেকেই ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে জমি দখল করছে।
বাংলাদেশের সব জেলায় জাল দলিল তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, এএলআরডির আজিম হায়দার প্রমুখ।